Bengali Poems

ধ্বংস

একটা ধ্বংস প্রশ্ন করে
আর একটা ধ্বংসকে
কীভাবে এই দশা
একটা ধ্বংস জিইয়ে রাখে
নিজের মধ্যে
গড়ে উঠবার প্রত্যাশা
একটা ধ্বংস বোঝাই যায় না
তবু আর একটা ধ্বংসকে
সান্ত্বনা দেয় মিথ্যে মিথ্যে
অধর্ম আর শোকে
একটা ধ্বংস ডেকে আনছে
আর একটা ধ্বংসকে

রাষ্ট্রগাথা

কিছু কি বলেছি?
জানতে চেয়েছি শুধু
প্রশ্ন করেছি
সাংবিধানিক অধিকার
কিছু কি বলেছি?
প্রতিবাদে প্রতিবাদে
ভেঙেছি আড়াল
যা ছিল আরব্ধতার
কিছু কি বলেছি
জল ভেঙে
কাদা মাটি ভেঙে ভেঙে শুধু
জানতে চেয়েছি
অসংখ্য বারবার
কেবল অভিযোগ উঠেছে
বিরোধিপক্ষ, দেশদ্রোহিতার
কে নেবে এ দায়
যে দায় রিরংসার
কে নেবে এ দায়
যে দায় অরাজকতার ?

একদিন

একদিন বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ব নির্দিষ্ট চোখের উপরে
ভিজিয়ে দেব, নির্জনে গড়িয়ে যাব অচেনা শরীর বেয়ে বেয়ে
একদিন তোমাকে চাইব
ভাঙবার আগে ঢেউ যেইভাবে বালুতট চায়
একদিন স্পর্শ করব, আচম্বিতে রোমকূপে ফুটে উঠবে ফুল
পরিখা পেরিয়ে শেষে পৌঁছে যাবে মোহনায় নিভৃত আঙুল
একদিন তোমাকে আমি সরাসরি প্রশ্ন করব চোখে রেখে চোখ
তোমার ঠোঁটের পাশে মুখ রেখে খুব কাছে আসব একদিন
দেখব ঘামের গন্ধ কতটা বা হতে পারে তেমন অমোঘ
একদিন তোমাকে আমি টেনে নেব এইভাবে কাছে, খুব কাছে
অন্ধের স্পর্শের মতো পেতে চাইব সাহচর্য, নিবিড় আশ্বাস
নিয়মবিহীন হব, প্রগলভ হবার অজুহাতে
ছোবল দেবার মতো জিভ দিয়ে শুষে নেব নাভির সন্ন্যাস
একদিন তোমাকে আমি আবিষ্কার করব অন্যভাবে
হয়ত তুমিও করবে, না বুঝেই
না ফোটা ফুলের কুঁড়ি দিনের প্রথম আলো চেনে যেইভাবে

যখনই ভালোবাসতে চেয়েছি

যখনই ভালোবাসতে চেয়েছি সকলেই আমার কাছে শর্ত রেখেছে
কোনো শর্তই পূরণ করতে পারব না বলে
কারো সঙ্গেই কখনো ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তুলিনি
যখনই ভালোবাসতে চেয়েছি
কোনো না কোনো কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে সকলে
কেউ অজুহাত দিয়েছে শীতের
কেউ বা বৃষ্টির
পাহাড়ের কাছে গিয়ে দেখেছি গভীর জঙ্গল
একটা ঝর্ণা রাস্তা খুঁজতে খুঁজতে ঢুকে পড়েছে তোমার ভিতরে
আর আমি সামান্য ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে
একটু একটু করে অর্জিত সকল সঞ্চয়
ফেলেছি হারিয়ে
যখনই ভালোবাসতে চেয়েছি
আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে একটা রেলগাড়ি
আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে চায়
ভালোবাসতে গিয়ে কি তাহলে আমাকে
দূরে সরে যেতে হবে?
এই দ্বিধায় শেষ পর্যন্ত কাউকেই ভালোবাসা হয়ে ওঠে নি
আমি যখনই ভালোবাসতে চেয়েছি
বারবার যখনই ভালোবাসতে গিয়েছি
অচেনা অস্পষ্ট একটা মুখ
বৃষ্টিভেজা বিকেলের সোনালী আলোর মত উদ্বেগহীন
আমাকে ক্রমাগত বিপর্যস্ত করে
মনে করিয়ে দিয়েছে ভালোবাসতে না পারার অক্ষমতা
সেই মুখটা যে কার, কিছুতেই বুঝে উঠতে পারিনি

ক্ষমতার উৎস কোথায় ?

ক্ষমতার উৎস কোথায়
অন্ধের মতাে সব সেদিকেই ধেয়ে কেন যায় ?
যেভাবে গড়ায় জল
যেভাবে সহ্যেরও সীমানা ছাড়ায়
ক্ষমতার দিকে যেতে মানুষেরা নিচে নেমে যায়
ক্ষমতা কি নিচে থাকে, কুয়াের গভীরে
মাটির আড়ালে যেখানে বৃক্ষেরা শিকড় ছড়ায় ক্ষমতায় পৌঁছতে তাই বুঝি সকলেই ক্রমাগত নিচে নেমে যায় ?
এসকল উপেক্ষা করে অবুঝ আমি
সম্ভাবনার সূত্র খুঁজে পৌঁছে এক গাছের পাতায়
দেখেছি দিনের প্রথম আলাে ভালােবেসে কীভাবে ছড়ায়
 
“আমি তো বলতেই পারতাম” কাব্যগ্রন্থ থেকে

দুর্গম

কে আগলায়, যে যার আগলে রাখে
জলের মধ্যে জলৌকা আর কীসের স্বপ্ন আঁকে?
আগলে রাখে সকাল থেকে আলগা হলেই হল
যেমন ভাবে বিষণ্ণতা মেঘের মত কালো
কে আগলায়, কে আর আগলে থাকে
যেভাবে ফুল নিজের মধ্যে রহস‍্যকে ঢাকে
যেভাবে এক পক্ষীশাবক ডানা ঝাপটায় জলে
মানুষ কত সহজভাবে মিথ্যে কথা বলে
 
(‘মনোবাঞ্ছা এক বিন্দু জল”… কাব্যগ্রন্থ থেকে )

দেবার পরেও

দিতেই যা কষ্ট বুঝি, নিতে কষ্ট নেই?
এত যে নিয়েছি তবু হাত কেন খালি
দেবার পরেও পরিপূর্ণ সেই তালু
অসফল যে প্রয়াস, অযথার্থ সেই উন্মোচন
প্রকারান্তরে কী সেই কষ্ট রাখা জেনে
দিই নি কখনো আমি
নিয়ে যদি থাকি সে তো নেহাতই কৌতূহল বশে
 
(“বকুল বামাপদ নিতাই আর আমি” বই থেকে )

দেবার পরেও

দিতেই যা কষ্ট বুঝি, নিতে কষ্ট নেই?
এত যে নিয়েছি তবু হাত কেন খালি
দেবার পরেও পরিপূর্ণ সেই তালু
অসফল যে প্রয়াস, অযথার্থ সেই উন্মোচন
প্রকারান্তরে কী সেই কষ্ট রাখা জেনে
দিই নি কখনো আমি
নিয়ে যদি থাকি সে তো নেহাতই কৌতূহল বশে
 
(“বকুল বামাপদ নিতাই আর আমি” বই থেকে )

স্পষ্ট করে কথা বলার সময়

কোনাে আড়ষ্টতা নয়, এখন স্পষ্ট করে কথা বলার সময়
কোনাে ইঙ্গিত নয়, চোখে চোখ রেখে পড়ে নিতে হবে
প্রতিটি হাইওয়ের গােপন করা ইতিহাস
কোনাে চাতুরি নয়, ঠোঁটের উপর ঠোঁট রেখে বুঝতে হবে
বলা ভালােবাসার কথাগুলাে কতখানি খাদহীন
কোনাে স্বীকারােক্তি নয়, জিভ ছুঁয়ে বুঝে নেব সঠিক লবণের স্বাদ
এখন স্পষ্ট করে কথা বলার সময়
 
ঘুম থেকে উঠে জেনে নেব আজ হাওয়া কোনদিকে বইছে
ভেসে যাওয়া কোনাে মেঘের মধ্যে কি লুকিয়ে আছে বৃষ্টির সম্ভাবনা?
পাহাড় না সমুদ্র, নিঃসঙ্গ মানুষকে কে বেশী টানে
আত্মহত্যা করতে চেয়ে যে মানুষ এসে পড়েছে একটা ভিড় স্টেশনে
আত্মহত্যা তার কাছে কতটা জরুরী?
এখন স্পষ্ট করে কথা বলার সময়
 
হাবেভাবে নয়,সরাসরি জানিয়ে দেওয়া দরকার অবস্থান
যারা বেঁচে থাকতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছি
আর যারা মৃত্যুকে আঁকড়ে ধরে রয়েছি বেঁচে
এদের মধ্যে প্রকৃত কারা রাজনীতিহীন?
যে লােকটা স্রেফ ভালােবাসবে বলে হেরে যেতে চেয়েছে
তার মধ্যেও কি কোনাে প্রতিবাদ গােপনে ছিল না?
 
আর একটু পরেই অন্ধকার নেমে আসবে
এক এক দিন কিংকর্তব্যবিমূঢ়
এই দুইয়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে নিজেকে মনে হয়
পারব, পারবতাে সব আড়ষ্টতা ভেঙে স্পষ্ট করে বলতে?

কী হবে শেষমেষে?

বন্ধুর দায় বন্ধু নিচ্ছে
আগুনের দায় চিতা
রাষ্ট্রের দায় নিক জনগণ
চাইছে রাষ্ট্রনেতা
জনগণ খুব অবুঝ সরল
প্রশ্নও ঠিকমত
করতে শেখেনি, মেনেই নিচ্ছে
রাষ্ট্রকে অবিরত
মানতে মানতে মানতে মানতে
কী হবে শেষমেষে
মৃতদেহের সঙ্গে যদি
রাষ্ট্রের লাশ মেশে?

স্বয়ন্বর ও মায়াবী জ্যা

দুটো উজ্জ্বল স্তনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে
শো-কেসে একটা ব্রা একসময় পুরনো হল
পছন্দ করতে করতেও
শেষমেশ যে মেয়েটি ছুঁয়েছিল অন্য তূণ
আজ তার মেয়ে বয়ঃসন্ধির প্রাচুর্য কিনছে মা’কে নিয়ে
নেড়ে চেড়ে লালচে হয়ে গেছে এই অজুহাতে সেও…
অন্য একটা নিল, মা খেয়ালই করল না
আর এবারও হতাশ হয়ে আরো এক প্রস্ত
বিষণ্ণ হল গ্যালারির পুরনো আসবাব
দোকানের মালিক প্রৌঢ় হলে তার ছেলে
শো-কেস সাজাতে সাজাতে বাতিল করে দিল
পুরনো লালচে হয়ে যাওয়া
আত্মপক্ষ সমর্থনের মায়াবী জ্যা
এক লোলচামড়া পাগলী সেটা কুড়িয়ে
মিশে গেল নিজের মধ্যে
অপেক্ষা করতে করতে কেউ জানল না
একটা ব্রা কখন পেরিয়ে গেল বয়সন্ধির স্তন

সাদামাটা জীবনের একদিন

ফিদেল খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠেন
সকালে হাঁটতে যাওয়া আমার মতই তাঁরও পুরনো অভ্যেস
ওঁর সঙ্গে প্রায়দিনই দেখা হয়ে যায়
দুজনেই দুজনকে দেখে অভিবাদন জানাই
বহুদিনের মুখচেনা, কিন্তু সেভাবে কথা হয়নি কখনো
নাম জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল ফিদেল বলেই আমাকে ডাকবেন
একবার এক শীতের সন্ধ্যায় একজন ভদ্রলোক এলেন
আমার নাম করে জানালেন আমাকেই খুঁজছেন
অথচ কিছুতেই বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না যে
আমিই সেই ব্যক্তি
পরিচয়পত্র দেখতে চাইলেন, বললেন
অনেক দূর থেকে আসছেন, ওঁর নাম শেক্সপীয়র
যে লোকটা রোজ বাড়িতে দুধ দিয়ে যায়
একদিন জানলাম তার নাম লেনিন
নিজের পুরো নামটা কিছুতেই গুছিয়ে বলতে পারল না সে
এক ভিখিরি অন্ধকারে গাঁজা খাচ্ছিল
ওর মুখ ভর্ত্তি দাড়ি
ধরা পড়ে যেতেই বেশ গম্ভীর মুখ নিয়ে বলল
চিনতে পারছেন না তো, আমাকে লোকে
ঈশ্বর বলে জানে
সিগন্যাল ভাঙার কারণে
একবার এক ট্রাফিক পুলিশ আমাকে আটকায়
সে বেচারি জীবনানন্দের নাম শুনেছে
তার বেশী কিছু জানে না
নিজের নাম জীবনানন্দ দাস বলে সেবার নিষ্কৃতি পাই
আমার সাদামাটা জীবন আরো অনেকের মত এরকমই
এই ফিদেল, শেক্সপীয়র, লেনিন, ঈশ্বর, জীবনানন্দ
শুধু একবার এক পাগল আমার এই সাদামাটা জীবনে ঢুকে পড়ে
দাবি করেছিল, তার নাম আর আমার নাম নাকি একই, কবিতাও লেখে
সেই একদিনই আমি একটু বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম।

ছাতা সংক্রান্ত

আপনি কি ছাতা ব‍্যবহার করেন?
মনে করছন ছাতা সভ‍্যতারই অনুকূল
পরিবর্তনশীল জলবায়ু থেকে ছাতা আপনাকে রক্ষা করতে সক্ষম?
আপনি কি ছাতার রং সম্পর্কে সন্দিহান
বিশ্বাস করেন কালো ছাতার চেয়ে লাল ছাতা
সবুজ ছাতার চেয়ে নীল
অথবা হলুদ ছাতার চেয়ে বেগুনী ছাতা
আপনাকে অধিক সমৃদ্ধ করে?
আপনার বন্ধুরা কি সবাই ছাতার গুনাবলী সম্পর্কে স্পর্শকাতর
স্বীকার করে ছাতার প্রয়োজনীয়তা
ছাতা ব‍্যবহারের সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল
কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করার আগে আপনি কি খোঁজ নেন
তিনি কি ছাতা ব‍্যবহার করেন?
আমেরিকার প্রেসিডেন্টের ছাতা আর
অমূল‍্য আঢ‍্যর ছাতার রং এক হলেও
এদের রাসায়নিক চরিত্র একেবারে আলাদা
আমি কিন্তু বরাবরই ছাতার ব‍্যবহার বিষয়ে আবেগহীন
যারা ছাতা ব‍্যবহার করেন তাদের অবিশ্বাসই করেছি বেশি
অতচ বিশ্বাস ক‍রুন
আমার সংগ্ৰহে দেশ -বিদেশের হরেক রকমের ছাতা
ছাতখর মেরামতি সম্পর্কে ও টুকটাক আমি কিছু জানি
আমার ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করবেন না
কোনভাবে আমাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা থেকে
নিজেকে সংযত করুন
সন্ত্রাসবাদীদের ছাতা ব‍্যবহার করে আমি দেখেছি
আমাকে অনেকটা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মতোই দেখায়
“আপনাকেই ঠিক করতে হবে গন্তব্য” কাব্যগ্রন্থ থেকে

স্বগতোক্তি নয়

বলতে বলতে বলেই ফেলেছি সব
ভাঙতে ভাঙতে ভেঙেছি যে কত কিছু
এড়াতে এড়াতে এড়িয়ে গিয়েছি দায়
নিচু হতে হতে আর কত হব নিচু?
 
মানতে মানতে মানিয়েছি সঙ্কট
সরিয়ে রেখেছি স্পৃহা আর যত ক্ষোভ
হারতে হারতে হেরেই গিয়েছি তবু
গড়েছি যখন দরকার প্রতিরোধ
 
হারিয়ে ফেলেছি সংগ্রহে থাকা ঋতু
হারিয়েছি যত জমানো সুসংবাদ
হারতে হারতে হারিয়ে ফেলেছি দেশ
শুধু জিইয়ে রেখেছি ভিতরে অবিশ্বাস
 
লিখতে লিখতে লিখেছি ভিন্নমত
লিখেছি ধর্ম, ধর্মের পরিহাস
লিখতে লিখতে বেড়েছে আশঙ্কা
চেনা মুখগুলো অচেনা অকস্মাৎ
 
শুধু লিখিনি গোপন অতিযাপনের রীতি
লিখিনি কোথায় কতটুকু ব্যর্থতা
হারিয়ে ফেলিনি স্বপ্নের অভিরুচি
লিখিনি বাঁচতে করেছি কী সমঝোতা

সীমারেখা

গাছ কি গাছ কে চেনে, বোঝে কত অন্তর্কলহ আকাঙ্ক্ষা যা অহেতুক, 
কতখানি আত্মীয়ের চেয়েও 
সম্পর্ক জরুরী রাখা, কুরুশ কাঁটায় বোনা, সূক্ষ্ম ও নিপুন 
চোখের জলের সঙ্গে মিশে থাকে যতটুকু নুন
গাছ কি এসব বোঝে, দূরত্বের নির্দিষ্ট আড়ালে 
কেন মাঝরাত হলে নক্ষত্রেরা নেমে আসে ডালে  পাশাপাশি মিশে থাকে, 
ভ্রম হয় কতখানি মধুর অন্বিত
 সম্পর্ক কখন হয় ভুল করে অনিচ্ছা বশত 
 
মানুষ তা কতখানি বোঝে?